জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১১

প্রজন্ম প্রবাসে (গল্প)


হাঁটতে হাঁটতে বাবা এক জায়গায় এসে থামলেন। উত্তরে, দক্ষিণে আর পশ্চিমে বারকয়েক তাকিয়ে মাথা নাড়লেন হ্যাঁ-সূচক ভঙ্গিতে, তারপর পুবদিকে ফিরে বিড় বিড় করে কী যেন হিসেব করতে লাগলেন। পুবে গ্রাম, চর আর কূলের মাঝখানে আগাগোড়া কোমর থেকে বুকসমান পানির আধমাইলটাক চওড়া ধারাটুকু পেরিয়ে গ্রামের সবুজ গাছপালার সারি; দিগন্তের সাথে সেঁটে আছে মনে হয়।

অনেক দূর এসে পড়েছি আমরা। কূল থেকে প্রথমে প্রায় মাইল দেড়েক হেঁটে এসে নৌকোয় মাঝখানের পানিপ্লাবিত অংশটুকু পেরিয়ে মূল চরে উঠেছি। সেখান থেকে আরো কম পক্ষে মাইল দুয়েক হেঁটেছি পশ্চিমে। প্রায়...

‘চার মাইল,’ বাবা যেন আমার চিন্তার রেশ ধরেই বলে উঠলেন।

আমি সচকিত হয়ে তাঁর দিকে তাকালাম। কিন্তু তিনি আমার দিকে তাকিয়ে নেই। তাঁর চোখ পুবের দিগন্তে সেঁটে থাকা গ্রামের দিকে। তাঁর শাদা দাড়ি অল্প অল্প বাতাসে দুলছে; বিড় বিড় করে হিসেব করতে করতে তিনি বললেন, ‘প্রায় চার মাইল হবে এখান থেকে গ্রাম, তাই না?’

আমি কাশলাম একটু। কিছু বলতে যাব ভাবছি, তিনি কিন্তু থামলেন না; বলে চললেন, ‘হ্যাঁ, চার মাইলের কম না। তাইলে সে হিসেবে, আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, এখানেই আমাদের বাড়ি হবে। তুই কী বলিস?’

যেন হঠাৎ সংবিত ফিরে পেয়েছেন, এভাবেই তাঁর কথার শেষ অংশটুকু আমার দিকে প্রশ্নাকারে ছুঁড়ে দিলেন।

আমি কী বলব? কিন্তু কিছু একটা তো বলতে হবে, তাই আবার কেশে গলা সাফ করতে গেলাম। তবে তার প্রয়োজন হলো না। বাবা নিজেই তাঁর প্রশ্নের জবাব দিলেন, ‘বাড়ি না হোক, পাড়া তো হবেই।’

আমি আস্তে করে বললাম, ‘হতে পারে।’

বাবা আমার দিকে তাকালেন। তাঁর চোখে সামান্য অসহিষ্ণুতা, যেন কোনোরকম সন্দেহই তিনি আশা করছেন না। তারপর দৃঢ় কণ্ঠে বললেন, ‘হতে পারে নয়, হবেই। মুন্সির হাট থেকে, মানে যেখান পর্যন্ত নদী ভেঙেছে, তার মানে কূল থেকে এ পর্যন্ত আমরা যদি চার মাইল হেঁটে আসি, তাইলে নিঃসন্দেহে আমাদের পাড়াতে, কে জানে, হয়তো আমাদের উঠোনে কিংবা বাড়ির সামনেই দাঁড়িয়ে আছি।’

আমি হঠাৎ একটু হাসলাম। বাবার হিসেব ভুলও  হতে পারে বলে নয়, তাঁর কল্পনা করার উৎসাহ দেখে। বাবা এখন কল্পনা করে আনন্দ পাচ্ছেন। তাঁর মুখ উদ্ভাসিত, চোখে সরল প্রত্যাশা। তাঁর মুখের  প্রতিটি রেখা এখন অদ্ভূত কোমল, পরিতৃপ্ত। অথচ বাবা যখন গম্ভ¢ীর থাকেন, কিংবা বিরক্তি বোধ করেন, তখন ওগুলোকে মনে হয় নিরেট পাথরের গায়ে এড়েবেড়ে কিন্তু সুস্পষ্ট অজস্র ফাটলের চি‎ে‎‎‎‎‎হ্নর মত। এখন বাবার উৎসাহ দেখে কে বলবে যে, জীবন সম্পর্কে তিনি ভীষণ হতাশাবাদী? শহরের ঘিঞ্জি এলাকায় একটা রঙচটা প্লাস্টারখসা একতলা দালানের অধিবাসী তিনি। ওটার ভেতরের অসংখ্য দাগে দুগে ভরা ভরা চার দেয়ালের মতই শ্রীহীন তাঁর বৃত্তাবদ্ধ দৈনন্দিনতা। অবসর জীবনে পেন্সনপ্রাপ্ত ট্যুসনিনির্ভর বাবার মনে কল্পনার কোনো স্থান নেই। সুখকল্পনার তো বটেই। কিন্তু সুখের কল্পনা যে মানুষকে কেমন আলাদা সৌন্দর্য দান করে, সেটা এ-মুহূর্তে বাবাকে দেখেই আমার জানা হলো।

‘তোর সম্ভবত মনে নেই আমাদের বাড়ির লোকেশন কেমন ছিল, ঠিক না?’ বাবা জিজ্ঞেস করলেন।

‘না।’ আমি মাথা নাড়লাম।

সত্যিই মনে নেই। কিংবা কিছু কিছু হয়তো আছেও। কিন্তু সেটা এতই অস্পষ্ট যে, সবটা মিলিয়েও একটা পূর্ণাঙ্গ ছবির রূপ পাওয়া যাবে না। আমার শুধু একটা বিরাট পুকুরের কথা মনে আছে, যেটায় অনেক লাল শাপলা ফুল ফুটে থাকত আর পুকুরটার পাড়ে তালগাছ না নারকেল গাছ ছিল কিছু। বাড়ির সামনে একটা শাদা ধূলিওড়া রাস্তার কথা চৈত্রের দমকা বাতাসে পাক খেয়ে ওঠা ধুলি-কুণ্ডলীর মতই হঠাৎ হঠাৎ মনে পড়ে। একটা বাগানের  কথাও ভাবতে পারি আমি আবছা আবছা, যেটায় আমটাম কুড়াতাম হয়তো। আর স্কুল, হ্যাঁ, একটা স্কুলের কথাও আমার স্মরণে আসে, যেটা ছিল চকচকে টিনের চাল আর বাঁশের বেড়াঅলা এবং স্কুলের মাঠে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সুর করে সবাই মিলে গান গাইতাম, ‘আমার সোনার বাংলা...’

আমি বড় হয়েছি শহরে। সব সময় দেখে আসছি ঘিঞ্জি এলাকা, গাড়িঘোড়া আর মানুষজন। সুতরাং স্মৃতির যে দু’একটা টুকরো টাকরা ছিল মনের গভীরে, সেগুলো নিয়ে ভাববার প্রয়োজন বোধ করিনি কোনোদিন। আমি তাই মাথা নাড়লাম আবার। ‘উঁহুঁ, মনে নেই আমার।’

বাবা হাসলেন মাথা দোলাতে দোলাতে, যেন আমার মনে না থাকাতেই ভালো হয়েছে। ‘দেখ,’ উবু হয়ে বসলেন তিনি। চরের নরম বালুর জমিনে তর্জনী দিয়ে দাগ কাটতে লাগলেন। উত্তরে-দক্ষিণে লম্ব^া ম্যাপের মত কিছু একটা আঁকলেন। বোঝা যাচ্ছে, এটা একটা গ্রামের পুরো ম্যাপ। ম্যাপের দক্ষিণ-পূর্ব কোনায় এক জায়গায় আঙুল রাখলেন। বৃত্তের মত গোলাকার দাগ দিলেন একটা। বললেন, ‘এটা, ধর, আমাদের বাড়ি। আর এটা হচ্ছে..’ বৃত্তের চারদিকে আরো কয়েকটা বৃত্ত আঁকলেন। ‘এটা হচ্ছে পাটোয়ারী বাড়ি, এটা মহাজন বাড়ি, এটা...’

একে একে বিভিন্ন বাড়ির নাম বলতে লাগলেন তিনি। আমি ম্লান হেসে বললাম, ‘এত সব বাড়ির নাম আমি শুনিনি আর।’

বাবা হাত ঝেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন আবার। ‘আমার কী মনে হয় জানিস? আমার মনে হচ্ছে, সব আবার আগের মতই হয়ে যাবে। সে পুরনো দিনের মত বাড়িঘর, গাছপালা, জমিজমা, হাট-বাজার...সব হবে। হবে না? তুই কী বলিস?’

আমি কী বলব? আগে এসব কেমন ছিল কে জানে? বাবা তো তাঁর কল্পনায় বর্তমানের ধুঁ ধুঁ চরের পটভূমিতে পুরনো দিনের সুখসমৃদ্ধ স্মৃতির প্রতিস্থাপনা খুঁজে পাচ্ছেন। কিন্তু আমি? আমার অত স্মৃতি কোথায়? আমার স্মৃতি বলতে আমার শহর; আমার শৈশব, কৈশোর আর যৌবনের প্লাস্টারখসা দালানের সন্নিকটস্থ দৈনন্দিন ঘিঞ্জি এলাকা, আর আমার কল্পনা হলো, সে-ঘিঞ্জি এলাকা পেরিয়ে সুদৃশ্য সব দালানকোঠাসমৃদ্ধ পরিচ্ছন্ন  এবং সুপরিসর অঞ্চল, যেখানে স্বপ্ন আর বাস্তবের সমন্বিত অবস্থ’ান বলেই আমার বিশ^াস। আমি কোনো মন্তব্য করলাম না। কিন্তু আমি খুব অবাক হচ্ছি। বাবাকে এত উচ্ছল আর এমন হালকা মেজাজে আগে কখনো দেখেছি বলে মনে পড়ছে না।

বাবা হঠাৎ পশ্চিম দিকে তর্জনী উঁচিয়ে ধরলেন। প্রায় কলকণ্ঠে চেঁচিয়ে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে উঠলেন, ‘দেখ দেখ, কতগুলো পাখি উড়ছে গোল হয়ে। ওগুলো কী রে? কবুতর, না?’

আমি ঠাহর করার চেষ্টা করতে করতে বললাম. ‘হ্যাঁ, কবুতরই তো মনে হচ্ছে।’

বাবা হেসে উঠলেন। ‘ঠিক তাই। সবগুলো গ্রাম থেকে উড়ে এসেছে। উড়ি পেকেছে তো, দানা খাবে খুঁটে খুঁটে। ওই দেখ...’ উত্তর দিকে প্রায় চরের মাটি ছুঁয়ে উড়তে থাকা আরেক ঝাঁক পাখি দেখালেন। ‘ওগুলো হচ্ছে বাবুই। বাবুই চিনিস তো?”

চেনারই তো কথা। জ্যান্ত না দেখলেও বয়নশিল্পী বাবুইর ছবি দেখেছি কত। আমি জবাব না দিয়ে বাবার দিকে চেয়ে থাকলাম। বাবাকে ভারী পরিতৃপ্ত দেখাচ্ছে। উড়ি ঘাসের দানা খুটে খাওয়ার জন্যে চক্রাকারে ঘুরে ঘুরে নামতে থাকা পাখিগুলোর দিকে তাকিয়ে পরম মমতায় বলে চললেন তিনি, ‘আসবে আসবে, বুঝলি, সব আসবে। এরপর ময়না, তোতা, শালিক, কাকÑসব আসবে। দেখবি, সব আগের মত হয়ে যাবে আবার।’

বাবার ভালোলাগা আমার মধ্যেও সংক্রমিত হতে চাচ্ছে। এ-মুহূর্তে ন্যাঙটো উদোম চরের শূন্য অবয়বে বাবার মত কল্পনার রঙ চড়াতে ভালো লাগছে আমারও। একটা পরিপূর্র্ণ ছায়াময় গ্রামের ছবি আঁকতে চাচ্ছি আমি। কিন্তু বাবার মত অমন স্বতঃস্ফূর্ততা পাচ্ছি না কেন? আমার ছবির রেখাগুলো কিছুতেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে না। উল্টেপড়া এক দোয়াত কালি যেন লেপে আছে আমার কল্পনার ক্যানভাসে।

আমাদের চারপাশে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত মানুষের অবয়ব দেখা যাচ্ছে। নতুন জেগেওঠা চরে এখনো মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু হয়নি। মাঝে মধ্যে উড়িঘাস ছাড়া অন্য কোনো উদ্ভিদ জন্মেনি এখানে। তবু মানুষের আসা-যাওয়ার বিরাম নেই। সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত তাদের বিচরণ চরের সবখানে। আমরা চর দেখছি, মানুষ দেখছি। দিগন্তের কোল ছুঁয়ে থাকা নদীর অস্পষ্ট রেখার দিকে তাকিয়ে আছি। আমাদের মাথার ওপরে সূর্য পুব থেকে পশ্চিমে হেলে পড়ছে। খিদে পেয়েছে আমার। আমি বাবাকে বললাম, ‘বাবা, চলেন।’

বাবা আমার দিকে ফিরে বললেন, ‘জানিস, আমাদের বাড়ির দক্ষিণে একটা বড়..খুব বড় পুকুর ছিল। তখন তো গ্রামে চাপাকল ছিল না। গ্রামের মানুষ তাই সে পুকুর থেকে খাবার পানি নিয়ে যেত। সে পুকুরের পাড়ে ছিল একটা বটগাছ....’

বাবা একটু থামলেন। আমি আগ্রহসহকারে তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। বাবা গ্রামের গল্প বলছেনÑএরকম স্মৃতি আমাদের কারো নেই। মার মুখে কিছু কিছু শুনেছি। কিন্তু মা কোনোদিন বাবার সামনে গ্রামের কথা বলতেন না। তাঁর হয়তো কিছুটা ক্ষোভও ছিল বাবার ওপর। একদিন কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘তোর বাবার কী যে কাণ্ড! নদী বাড়িঘর ভেঙে নিয়েছে, সে জন্যে রেগে অস্থি’র হয়ে আছে। নিজে তো গ্রামের নাম মুখে আনবেই না, কাউকে বলতে শুনলেও খেপে যাবে।’

আমি মাকে দুষ্টুমি করে বলেছি, ‘তুমিও না আনলেই পার।’

মা বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, ‘তুইও বলছিস, না? বলবিই তো। বাপের বেটা যখন...’

আমি হাসতে হাসতে বলেছি, ‘বাপের কেন শুধু, মা? আমি তোমারও তো পুত্ররতœ বটে। কিন্তু কথা হলো, আমার বাপের ভিটে যে গ্রামে ছিল, তোমার বাপের ভিটেও ছিল সে গ্রামে। বাবা যদি তার বাপের ভিটের কথা ভুলতে পারেন, তুমি কেন তোমার বাপের ভিটের কথা ভুলতে পার না?’

মা বুঝি খুব অভিমানী, তাই মুখ ভার করে বলেছিলেন, ‘ভোলা যায়, পাষাণ হলে। তবে...’ এরপর বিষণœ স্বরে বলেছেন, ‘পাষাণও গুঁড়ো হয় রে, সময় হলে।’

আমার এখন মনে হচ্ছে, মার কথাই বুঝি ঠিক। বাবা হয়তো নদীর ওপর অভিমান করে নিজেকে পাথর করে তুলেছিলেন। তাই তিনি গ্রামের গল্প করতেন নাÑআর অসচ্ছলতা তাকে রুক্ষ এবং হতাশ করে তুলেছিল বলে আমাদের সাথে তার দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু যখন শুনলেন সে ভাঙা গ্রাম আবার চর হয়ে জেগে উঠেছে, তখন আর থাকতে পারেননি। আমাকে সঙ্গে নিয়েই গ্রামযাত্রা করেছেন। আসলে বাবা পাথর হয়েছিলেন, তবে নিরেট নয়, ফাঁপা। তাই প্রত্যাশার প্রথম আঘাতেই ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গিয়েছিল তাঁর অভিমান। গ্রামে আমাদের নিকটাত্মীয় আর কেউ নেই, তবু বাবা স্বভাববিরুদ্ধভাবেই দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছেন আমাকে নিয়ে এবং এক সপ্তাহ আগেও যিনি সারাক্ষণ আমাদের সামনে গম্ভীর কিংবা বিরক্তিতে ‘ফাটব-ফাটব’ অবস্থায় থাকতেন, তিনিই এখন উন্মুক্ত চরের মাটিতে এক আকাশ রোদ মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাকে গ্রামের গল্প শোনাচ্ছেন।

বাবা বলে চললেন, ‘বটগাছটা ছিল খুব পুরনো। তুই অবশ্য দেখিসনি।। তোর জন্মের আগেই ওটা কেটে ফেলা হয়েছিল। আমরা ছোটবেলায়..’

বাবা ছোট ছিলেন! কখন? আমি হতভম্বের মত তাঁর দিকে তাকিয়ে আছি। বাবা হাসছেন, লজ্জামিশ্রিত হাসি। যেমন একটা বাচ্চা ছেলে হাসে বড়দের সামনে তার একান্ত কোনো কথা বলতে গিয়ে।

‘বটগাছটার গোড়ায় আমরা খেলাধুলা করতাম। বটের ঝুরি ধরে ঝুলতাম...’ বাবা বলে যাচ্ছেন। ‘বুঝলি, ছোটবেলায় আমি বাঁশি বাজাতাম, ভালোই পারতাম বাজাতে। বটগাছের গোড়ায় বসে বন্ধুদের নিয়ে গানটানও গাইতাম।’

আমাদের মাথার ওপর নিঃসীম নীলাকাশ, আলোকিত সূর্য; আমাদের চারপাশে মৃদু হাওয়ার অদৃশ্য উল্লাস আর আদিগন্ত শূন্যতা। এরকম শূন্যতা আমার  খারাপ লাগছে নাÑবরং শূন্যতা আমাকে শিহরিত করছে, উন্মথিত করছে। বাবার কথা, তার ছেলেবেলার গল্প সবাক চলচ্চিত্রের মত শূন্যতায় দৃশ্যায়িত হচ্ছে নানা বর্ণ-ব্যঞ্জনায়। বাবা যেন আরব্যোপন্যাসের অন্ধকার থেকে উঠে এসেছেন কোনো এক ঝলমলে শাহজাদার মত তাঁর সমস্ত গাম্ভীর্য, ব্যর্থতা আর রুক্ষতাকে অতিক্রম করে।....বাবা আমার সামনে দৌঁড়াচ্ছেন, লাফাচ্ছেন, বটের ঝুরি ধরে ঝুলছেন, দুলছেন, বাঁশি বাজাচ্ছেন আপন মনে, বড় পুকুরের টলটলে জলে হাত-পা ছুঁড়ে সাঁতার কাটছেন...

কিন্তু, শূন্যতা শিহরিত করলেও আমি আর কতক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন