জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১১

খাট


পূর্বপুরুষ তার খাট ছেড়ে চলে গেছে তিনশ' বছর
খাটখানি রয়ে গেছে. বয়সের সাথে সাথে বেড়েছে কদর
প্রাচীনত্ব গায়ে মেখে দিনে দিনে ঋদ্ধতায হয়েছে প্রবীণ
বনেদিপনার খুব জ্বলজ্বলে ভাঁজ এঁকে কপালে কঠিন
পড়ে আছে বড় ঘরে, অনড় আসন পেতে পুরুষানুক্রমে
মহান বটের মতো সন্ন্যাসীর চেয়ে বড় গম্ভীর আশ্রমে।....

বাবার প্রস্থান শেষে আমি তার পরিত্যক্ত মঞ্চের নায়ক
দৈনিক ক্লান্তির ভার এক পাশে ছুঁড়ে ফেলে আরামদায়ক
পুরোটা রাত্রির ঘেরে শুয়ে থাকি সুনিশ্চিত অর্ধখাটেশ্বর
বাকিটা প্রিয়ার জন্যে, যার বুকে ন্যস্ত রেখে পেৌরুষের ভর
ভারমুক্ত আমি খুব; ঘুমুই তৃপ্তির ঘুম খান্দানি খাটের
শতাব্দীপ্রাচীন বুকে অবিকল ভূমিকায় সুখি সম্রাটের।.

সাম্রাজ্যের হস্তান্তর যুগে যুগে ঘটে যায় অমোঘ শাসনে
ইতিহাস নির্লিপ্ততা বুকে সেঁটে বসে থাকে নিজের আসনে
চুপচাপ; নির্বিকার কালের পুতুল নাচে বৈষ্ণবী মুদ্রায
‌'
অনিত্য অনিত্য' বলে বোল তোলে বাঁয়া-তবলায়
মধ্যরাতে শ্রোতাদের নিদ্রামগ্ন চোখে তবু জীবন যাপন
বনেদি কাঠের খাট দৈনন্দিন আয়োজনে একান্ত আপন

পূর্ব পুরুষ তার খাট ছেড়ে চলে গেছে তিনশ' বছর
খাটখানি পড়ে আছে প্রাচীন ভিটের মতো অজর, অনড়
বাবার প্রস্থান শেষে আমি তার পরিত্যক্ত মঞ্চের নাযক
বনেদি খাটের নামে প্রত্যাশায় মন্ত্রমুগ্ধ স্মৃতির গায়ক
উঠোনে ছড়াই বীজ, একদিন চারা হবে বিশাল পল্লব
পশ্চিমের নদী হতে শেষ রাতে ভেসে আসে ক্ষয়ের কল্লোল

বুধবার, ২ নভেম্বর, ২০১১

তোমার চলার পথ (কিশোর কবিতা)


তোমাকে দেখেই যদি পাখিরা তাদের গান থামিয়ে
দিতে চায় দিক তবে, তুমি কিছু বোলো না তাদের
ফুলেরা পাপড়ি বুজে হাসিমুখ নেয় যদি নামিয়ে
নিক তারা, কী আছে বলার তাতে? তারাদের
আসরে না-ই বা গেলে
চাঁদের প্রদীপ জ্বেলে
আকাশ অন্ধকারে তোমার চলার পথ আলোকিত না যদি করে
তুমি থেমে যেয়ো না তো--পাহাড়ের কাছে যাও, জেনে  নাও
হাজার বছর ধরে নিজের মতন করে নিজেকে বাঁচাতে হয় কী করে
কীভাবে গাছের মতো মাটিকে আপন ভেবে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় শিকড়ে?

তুমি গান গেয়ে যাও, ঝরনা ঘুমিয়ে যদি
থাকে থাক--ক্ষতি কী তাতে?
নদীরা নীরবে বয়ে গেলে যাক
মায়াবী রাতে
ঘুমের গহীনে এসে মোহিনী স্বপ্ন বীণা না-ই বা বাজাক
সোনালি রোদের রেখা যদি না ফোটেও কোনো কালো প্রভাতে
কী হবে তাতে?
তোমাকে তো যেতে হবে চেনার সীমানা ছেড়ে
অচেনার অঙ্গনে অসীম রাতে।

হাজার রজনী ধরে বাঁচার স্বপ্ন নিয়ে
পথ হাঁটে একাকিনী শাহেরজাদী
গল্প ফুরিয়ে গেলে স্বপ্ন হারিয়ে যাবে
জীবন যে হবে তামাদি
আরবের মরু ছেড়ে ইরাক ইরান আর ভূমধ্য সাগরের তীরে
নীলের মোহনা হতে মিসিসিপি আমাজান ইয়াংসি যমুনার চরে
পৃথিবীর সমস্ত মহাদেশ ঘিরে
হাঁটছে শাহেরজাদী জীবনকে ভালোবেসে, তার মতো তুমি
তুমিও এগিয়ে চলো তোমার চলার পথে
হে পথিক জীবনবাদী।

বৃষ্টি ঝরুক (কিশোর কবিতা)


বৃষ্টি ঝরুক বৃষ্টি ঝরুক
এবার তবে বৃষ্টি ঝরুক
মাথার ওপর গুমোট মেঘের
জমাট কঠিন পাহাড় নড়–ক
পায়ের নিচে পাথর জমির
খটখটে বুক ঘাসে ভরুক
ঝরঝরিয়ে বৃষ্টি ঝরুক।


বৃষ্টি নামুক বৃষ্টি নামুক
ঝিরঝিরিয়ে বৃষ্টি নামুক
পুবের হাওয়া দিক না দোলা
কালবোশেখির ঝাপ্টা থামুক
আকাশ হিমেল মেঘে ছেয়ে
তাল-সুপুরির পাতা বেয়ে
বাঁশবাগানে পাটের ক্ষেতে
অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামুক
গুমোট মেঘের পাহাড় ঘামুক
আকাশ বেয়ে ঝরনা নামুক।


‘লু’ সাহারা বইছে করাল
জিহ্বা মেলে, নেই যে আড়াল
শাল-পিয়ালের সবুজ বনে
দলকলমির আস্তরণে
নেই ঢাকা মাঠ পুকুর নদী
ন্যাঙটো উদোম সমস্ত দেশ
হায় রে মাটির ঝলসানো বুক
পলিমাটির দেশে অসুখ
পুড়ছে মাটি-মানুষের বুক
এই আগুনের  নেই কী রে শেষ!


বৃষ্টি আসুক বৃষ্টি আসুক
বৃষ্টিতে মন-মাটি ভাসুক
কদম-কেয়ার পাপড়ি হাসুক
বৃষ্টি আসুক বৃষ্টি আসুক;
বৃষ্টিতে বান-বন্যা উঠুক
সাত সাগরের প্লাবন ছুটুক
নুহ নবীর কিস্তি বেয়ে
চিরকালের কোরাস গেয়ে
মানুষ যাবে নতুন চরের
সন্ধানে, আহ বৃষ্টি ঝরুক
ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি ঝরুক।